বাসক পাতার ১০টি উপকারিতা - ঔষধি গুনাগুন জানুন বিস্তারিত
আপনারা অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, বাসক পাতার উপকারিতা - ঔষধি গুনাগুন আছে
কিনা? আমি বলব হ্যাঁ অবশ্যই আছে। ছোটবেলায় ঠান্ডা কাশি হলে দাদী,
নানিরা একরকম পাতার রস বানিয়ে দিত। যা খেতে অনেক তেতো। তখন বুঝতে
পারিনি এটা আসলে কি। আজ এই আর্টিকেলটি লিখতে বসে মনে পড়ে গেল সেই তেতো
স্বাদের কথা। আসলে এই পাতাটার নাম হলো বাসক পাতা।
ফিচার ইমেজ ০১
বাসক পাতার উপকারিতার কোন শেষ নেই। এটি আমাদের মানব দেহের জন্য অত্যন্ত
দরকারি ভেষজ ঔষধ। নানা রকম রোগের নিরাময় করে বলে একে চিকিৎসা শাস্ত্রে মহা
ঔষধ বলা হয়। আজ আমি এই আর্টিকেলটিতে আপনাদের জানাবো, বাসক পাতার ১০টি
উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন সম্পর্কে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ বাসক পাতার ১০টি উপকারিতা - ঔষধি গুনাগুন
- বাসক পাতার ১০টি উপকারিতা জেনে নিন
- বাসক পাতা কি? কোথায় পাওয়া যায়?
- বাসক পাতার বিভিন্ন জাতের নাম
- বাসক পাতায় আসলেই কি ঔষধি গুনাগুন আছে?
- বাসক পাতার পুষ্টি উপাদান সমূহ
- বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়মবিধি
- গর্ভাবস্থায় বাসক পাতার রস খেলে কি হয়
- অন্যান্য কাজে বাসক পাতার ব্যবহার বিধি
- বাসক পাতা রসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- লেখকের মন্তব্য সম্পর্কে জানুন
বাসক পাতার ১০টি উপকারিতা জেনে নিন
বাসক পাতা হল পুরনো আয়ুর্বেদিক ওষুধ। যা প্রাচীন ভারতে
আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে মহা ঔষধ নামে পরিচিত ছিল। বাসক পাতার উপকারিতা
বলে শেষ করার যাবে না। তারপরেও আজকে আমি আপনাদেরকে জানাবো বাসক পাতার নানা
উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন দেরি না করে শুরু করি।
- কাশি নিরাময়ে বাসক পাতা অনেক কার্যকরী। সর্দি কাশি হলে দুই থেকে তিনটা বাসক পাতা থেতলে এর রস বের করে এক গ্লাস পানিতে গুলিয়ে নিন। যেহেতু এর স্বাদ অনেক তেতো, তাই আপনারা চাইলে এক চামচ মধু যুক্ত করতে পারেন। এই পাচন খাওয়ার ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে আপনার সর্দি কাশি একদম ঠিক হয়ে যাবে।
- বাসক পাতার রস উকুন নাশক হিসেবে কাজ করে। বাসক পাতার রস যদি গোসল করার কিছুক্ষণ আগে মাথায় দিয়ে রাখেন। তাহলে আপনার মাথার সমস্ত উকুন মরে যাবে।
- প্রসাবে জ্বালাপোড়া কমায়। বাসক পাতার রস শরবত বানিয়ে খেয়ে নিলে প্রসবের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি মিলে।
- চুলকানি প্রতিরোধে বাসক পাতা অনেক কার্যকরী। ১০ থেকে ১৫ টি কচি বাসক পাতা ও একটি হলুদ বেটে নিয়ে দাদ বা চুলকানিতে লাগালে। দুই থেকে একদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়।
- বাসক পাতা বাতের ব্যথা নিরাময় করে। এতে থাকা পুষ্টি উপাদান আন্টি ইনফ্লেমেটরি বাতের ব্যথা নিরাময়ে ব্যাপক কার্যকরী।
- বাসক পাতা নিউমোনিয়া রোগ দূর করে। বাসক পাতার রস ও এক চামচ মধু মিশ্রিত শরবত পান করলে নিউমোনিয়ার মত রোগ থেকে নিরাময় পাওয়া যায়।
- আমাদের মুখে অনেক সময় ব্রণ হয়। আবার মাঝেমধ্যে এলার্জির সমস্যা দেখা যায়। এগুলো আসলে হওয়ায় রক্ত অপরিষ্কার থাকলে। বাসক পাতার রস মিশ্রিত পাচন খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। তাই বাসক পাতার রস রক্ত পরিষ্কার করতে সহায়তা করে।
- শুধু তাই নয় বাসক পাতার রস রক্ত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- বাসক পাতা জন্ডিস রোগ নিরাময় করে। বাসক পাতার ফুলের রস ও মধু মিশ্রিত করে খেলে। জন্ডিস দূর করা সম্ভব।
- ঋতুস্রাব সমস্যায় বাসক পাতা অনেক কার্যকরী। ঋতুস্রাবের সময় অনেক মহিলার অতিরিক্ত রক্তপাত ও পেটে ব্যথা ছাড়া অনেক সমস্যা দেখা যায়। বাসক পাতার রস খেলে এই সমস্যা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়।
তাহলে বুঝতে পেরেছেন কেন বাসক পাতাকে মহা ওষুধ বলা হয়। উপরে বর্ণিত ১০
টি উপকারিতা ছাড়াও আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। তাই আপনারা সবাই বাসক পাতার
রস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বাসক পাতা কি? কোথায় পাওয়া যায়?
বাসক পাতার বিভিন্ন জাতের নাম
বাসক পাতা ভারত উপমহাদেশে পাওয়া যায়। এছাড়া আপনি সমগ্র পৃথিবীতে ঔষধি
গুনসম্পন্ন বাসক পাতা উদ্ভিদ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে বাসক গাছের
প্রকারভেদ রয়েছে। যেহেতু এটি ওষুধি গুণ সম্পন্ন। তাই আমাদেরকে
সঠিক বাসক পাতা খেতে হবে। ঔষধি গুনাগুনের ভিত্তিতে বাসক গাছ প্রধানত
দুই প্রকার।
- শ্বেত বাসক (সাদা ফুল)
- রক্ত বাসক (লাল ফুল)
আরও পড়ুনঃ পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক জেনে নিন
শ্বেত বাসক হালকা হলুদ রঙের কান্ডযুক্ত উদ্ভিদ। এটি ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। শ্বেত বাসকের ফুলের রং সাদা। অন্যদিকে রক্ত বাশক ফুলের রং লাল। শ্বেত বাসকের পাতা আকারে অনেকটা বড়।কিন্তু রক্ত বাসকের পাতা মাঝারি আকৃতির। শ্বেত বাসক ও রক্ত বাসকের মধ্যে শ্বেত বাসকের চাহিদা বেশি। কারন শ্বেত বাসক ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন।
বাসক পাতায় আসলেই কি ঔষধি গুনাগুন আছে?
ভেষজ ঔষধ হিসেবে যদিও বাসকের পাতাই বেশি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু বাসকের পাতা কাণ্ড মূল সবই ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে বাসক একটি মহা ঔষধ। কারণ এতে রয়েছে ভ্যাসিনিন। যা নানা রকম দুরারোগ্য রোগ থেকে মুক্তি লাভ করতে ব্যাপক কার্যকরী। বাসকের কাঁচা ও শুকনো উভয় পাতাই ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
ফিচার ইমেজ ০২
আমরা সাধারণত সর্দি ও কাশি কমাতে বাসক পাতার রস খেয়ে থাকি। এছাড়াও বহু পুরনো কাশি দূর করার জন্য বাসক পাতার রস ব্যবহার করা হয়। কারণ এতে থাকা ভ্যাসিনিন কফকে তরল করে দেয়।ফলে সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও বাসক পাতার রসে বিদ্যমান প্রাকৃতিক উপাদানের জন্য রক্ত সঞ্চালন, চুলকানি প্রতিরোধ, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া কমায়, বাতের ব্যথা নিরাময়, মুখের ব্রণ দূর, জন্ডিসের সমস্যা দূর ইত্যাদি রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বাসক পাতার পুষ্টি উপাদান সমূহ
পুরনো শাস্ত্রে বাসক পাতার রস অনেক কার্যকরী ঔষধ হিসেবে পরিচিত। কারণ এতে রয়েছে প্রাকৃতিক উপাদান ভ্যাসিনিন ও অয়েল। যা বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। বাসক পাতার অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল; ভ্যাসিসিন, ভ্যাসিসিনোন, ভ্যাসিসিনোল, ভ্যাসিসিকল, এ্যাসেনশিয়াল অয়েল, ভোলাটাইল অয়েল ইত্যাদি পুষ্টি উপাদান।
বাসক পাতায় উপরোক্ত পুষ্টীয় উপাদান থাকায় রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত
হয়। যেমন সর্দি কাশি দূর করতে, মুখের ব্রণ দূর করতে, বাতের ব্যথা
দূর করতে, নিউমোনিয়া দূর করতে, পা হাতের ব্যথা দূর করতে, জন্ডিস
রোগ নিরাময়ে ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। তাই বাসক পাতার রস খাওয়া
অনেক উপকারী। নিয়ম মেনে বাসক পাতার রস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়মবিধি
বাসক হল ভেষজ গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ। বিশেষ করে এর পাতা রোগ প্রতিরোধে ব্যাপক কার্যকারিতা রয়েছে। বহু আগে থেকেই নানারকম রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাসক পাতার বহুমুখী উপকারিতা আমাদেরকে মুগ্ধ করে। তবে বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়মাবলী আছে। নিয়ম মেনে বাসক পাতার রস খেতে পারলে রোড থেকে নিরাময় পাওয়া যায়। আজকে আমরা বাসক পাতার রস খাওয়ার নিয়মাবলী সম্পর্কে জানব।
- বাসক গাছের ৮ থেকে ১০ টি পাতা সংগ্রহ করুন। এরপর হামান দিস্তায় অথবা ব্লেন্ডারে সামান্য পরিমাণে পানি দিয়ে পেস্ট করে ফেলুন। এরপর ছাঁকনির সাহায্যে রস ছেকে নিন। দিনে এক থেকে দুই চামচ খাওয়া যাবে।
- সকালে খালি পেটে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। তবে যদি কারো সর্দি বা ঠান্ডা লেগে থাকে তাহলে দিনে যে কোন সময় দুই থেকে তিন বার খেতে হবে।
- এই প্রক্রিয়া চার থেকে পাঁচ দিনের বেশি বহাল রাখা ঠিক না। সে ক্ষেত্রে আপনাদের চিকিৎসকের পরামর্শ দরকার।
গর্ভাবস্থায় বাসক পাতার রস খেলে কি হয়
বাসক পাতা ভেষজ ওষুধ হয় এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। যেহেতু গর্ভাবস্থা একজন মা ও শিশুর জন্য অনেক মূল্যবান একটা সময়। তাই এই সময়ে কোন ভুল সিদ্ধান্ত মা ও শিশু উভয়ের জন্য মঙ্গলময় নয়।বাসক পাতায় প্রাকৃতিক উপাদান ভ্যাসিনিন ও অয়েল থাকে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য একদমই উপকারী নয়। গর্ভাবস্থায় বাসক পাতার রস খাওয়া থেকে এড়িয়ে থাকতে হবে।
আরোও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
গবেষকদের মতে গর্ভাবস্থায় বাসক পাতার রস খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে
যায়। এছাড়াও বাসক পাতার রস খেলে গর্ভবতী মা ও শিশুর শারীরিক ও মানসিক
বিকাশে বিপর্যস্ত ঘটে। যেহেতু বাসক পাতার রস একটি ভেষজ উপাদান। তাই
গর্ভাবস্থায় ভেষজ ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া
দরকার।
অন্যান্য কাজে বাসক পাতার ব্যবহার বিধি
প্রাচীন ভারতে বাসক পাতা ভেষজ ঔষধ রূপে ব্যবহৃত হয়। বাসক পাতা মূলত রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন সর্দি কাশি , নিউমোনিয়া রোগ , ত্বকের সমস্যা ছাড়া আরো নানারকম রোগ নিরাময়। কিন্তু বাসক পাতার রোগ নিরাময় ছাড়াও আরো নানারকম কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আজকে আমি আপনাকে জানাবো অন্যান্য কাজে বাসক পাতা কিভাবে ব্যবহৃত হয়?
ফিচার ইমেজ ০৩
বাসক গাছ ফসলের জমিতে চার পাশে লাগালে। এই পাতার গন্ধে পশুপাখি ফসলের জমিতে আসতে পারেনা। ফলে বাসক গাছ ফসল রক্ষা করে। কোন কিছু প্যাকিং অথবা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বাসক পাতা ব্যবহার করা হয়। বাসক পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় উপাদান আছে যার কারণে ছত্রাক জন্মাতে পারে না।আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা বাসক পাতা খাইয়ে টিউমার রোগ নির্ণয় করতে পারেন।
বাসক পাতা রসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ঔষধি গুণের জন্য বাসক পাতা অনেক উপকারী। এজন্য চিকিৎসকেরা বাসক পাতাকে মহা
ওষুধ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাসক পাতা এলোপতি ও হোমোপতি উভয় ক্ষেত্রেই
ব্যাপক রোগ বিনাময় করে।কিন্তু সব কিছুরই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
থাকে। চলুন আজকে জানব বাসক পাতা রসের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কি কি?
বাসক পাতার রস তেতো স্বাদের হয়ে থাকে। সর্দি কাশির জন্য সর্বোত্তম
ভেষজ ঔষধ হল তুলসী পাতা।এরপর বাসক পাতার রস। এটি প্রয়োজনের বেশি খেলে
বমি বমি ভাব ও পেটের নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। গর্ভাবস্থায় বাসক পাতার
রস খাওয়া একদমই নিষেধ। বাসক পাতার রস নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরে শর্করার
পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যার শরীরের পক্ষে ভালো না।
লেখকের মন্তব্য সম্পর্কে জানুন
আপনারা যদি উপরের সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনারা
জেনে গেছেন বাসক পাতার 10 টি উপকারিতা ও ঔষধি গুনাগুন। এছাড়াও বাসক
পাতার নানা দিক সম্পর্কে জেনেছেন। তাই আপনাদের নতুন করে আমার জানানোর
কিছু নেই।
তবে আমার মন্তব্য হলো; বাসক পাতা যেহেতু অনেক ভেষজ গুণাবলী সমৃদ্ধ। তাই
নিয়ম মেনে এটাকে খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই বাসক পাতার রস
নিয়মিত খাওয়া যাবে না। কারণ এতে আমাদের শরীরের উপর নানারকম ঝুঁকি
সৃষ্টি হবে।
উপরের আলোচ্য বিষয়ে যদি আমার কোন ভুল হয়ে থাকে। তাহলে অবশ্যই আপনারা
ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যদি আপনাদের মনে হয় যে, কোন কিছু বাদ পড়েছে বা
ভুল হয়েছে তাহলে তা কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এতে করে আমি পরবর্তী
আর্টিকেলগুলো আরো নির্ভুলভাবে আপনাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করব। সুস্থ
থাকবেন ভালো থাকবেন।
gotechbd এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url