হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা - খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন

  বাসক পাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন

আপনারা অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা - হাতিশুর গাছ কি? হ্যাঁ আপনারা সঠিক জায়গায় ক্লিক করেছেন।  আজকে আমি আপনাদের জানাবো হাতিশুর গাছের উপকারিতা এবং হাতিশুর গাছ কি এবং এর সকল গুণাবলী সম্পর্কে। সুতরাং সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

ফিচার ইমেজ ০১ 

হাতিশুর গাছ এশিয়া মহাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে পাওয়া যায়। পুরনো দালানের গা ঘেঁষে, ঝোপ ঝাড়ে আগাছার মত জন্মাতে দেখা যায়। আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী শাস্ত্রে হাতিশুর গাছের ব্যাপক কদর।এটি সাধারণত গ্রাম অঞ্চলে 'হাতিশুর' গাছ  নামে পরিচিত। এর পাতা মূল কাণ্ড মানব দেহে নানারকম রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।

পোস্ট সূচীপত্রঃ হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা

• হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা
• হাতিশুর গাছ কি? হাতিশুর গাছ কোথায় পাওয়া যায়? 
• হাতিশুর গাছের পুষ্টি উপাদান কি কি
• যৌন সমস্যায় হাতিশুর গাছের ব্যবহার
• হাতিশুর গাছের উপকারিতা জেনে নিন 
• হাতিশুর গাছ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন 
• হাতিশুর গাছের গুড়া খাওয়ার নিয়ম জানুন 
• হাতিশুর গাছ - শিকড় খাওয়ার সতর্কতা সম্পর্কে জেনে নিন 
• হাতিশুর গাছের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানুন
• লেখকের মন্তব্য জেনে নিন

হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা

হাতিশুর গাছের শিকড়ের ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে। আজ আমরা হাতে সুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা সম্পর্কে জানব। হাতিশুর গাছের শিকড়ে ব্যাপক ভেষজ গুণ রয়েছে যা শরীর ও পেশির নানা রকম ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এর শিকড়ের রস আক্রান্ত স্থানে লাগালে সাথে সাথে ব্যথা ও জ্বালাপোড়া কমে যায়। 

আরও পড়ুনঃ চিরতা কি কিডনির ক্ষতি করে জানুন বিস্তারিত?   

 বিভিন্ন বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, অম্বল, গ্যাস ইত্যাদি সমস্যার সমাধান করে। হাতিশুর গাছের শিকড় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। শরীর থেকে টক্সিন বের করে শরীরকে পরিষ্কার রাখে। খিটখিটে মেজাজ দূর করতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে সুস্থ রাখে। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন; ফুসকুড়ি, এলার্জি ইত্যাদি সমস্যা সমাধান করে। 

হাতিশুর গাছ কি? হাতিশুর গাছ কোথায় পাওয়া যায়? 

হাতিশুর গাছ হল একটি বেশ হতো গাছ। এটি গ্রাম বাংলার পুরনো বাড়ি, রাস্তার ধারের আগাছা এ সমস্ত জায়গায় বেড়ে ওঠে। এর কান্ড ও রোম অনেক নরম। সারা বছরই এই গাছে ফুল ফোটে। তবে বর্ষাকালে এ গাছে অনেক বেশি ফুল দেখা যায়। হাতিশুর গাছের রস আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় অনেক কার্যকরী। আমরা অনেকেই হাতিশুর গাছ দেখে থাকলেও এর উপকারিতা সম্পর্কে কোন কিছুই জানিনা। 

হাতিশুর গাছের পুষ্টি উপাদান কি কি

হাতিশুর গাছ অনেক পুষ্টি অবদান সমৃদ্ধ ভেষজ উদ্ভিদ। এর মধ্যে নানা রকম পুষ্টি উপাদান রয়েছে।এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এছাড়াও হাতিশুর গাছের শিকড় ও গাছ প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ। এ গাছের শিকড় ও কান্ড আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।  

ফিচার ইমেজ ০২ 

কারণ এই গাছে রয়েছে কার্বোহাইডেট, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই পুষ্টি উপাদানগুলো মানব দেহের প্রদাহ জনিত সমস্যা, শরীরের ক্লান্তি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম ও আরো নানা রকম সমস্যা দূর করে থাকে। এই গাছের আরো পুষ্টি উপাদান গুলোর মধ্যে রয়েছে লিথোফেনল, এলক্যালাইড ও টেনিন ইত্যাদি। 

যৌন সমস্যায় হাতিশুর গাছের ব্যবহার 

হাতিশুর গাছের শিকড় প্রাচীন ভারতীয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিশেষ করে যৌন সমস্যায় এর ব্যাপক কার্যকারিতা।  হাতিশুর গাছের শিকরে থাকা নানা রকম পুষ্টি উপাদান যা যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও আরো নানারকম যৌন সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। নিচে আমরা এর আরও উপকারিতা জানবো । 

আরও পড়ুনঃ অর্জুন গাছের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন  

হাতিশুর গাছের শিকড় কে গুঁড়ো করে এক কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে যৌন উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। শিকড়ের মধ্যে থাকা কিছু উপাদান যৌন আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি করে। এছাড়া যেসব পুরুষের ইরেকটাইল ডিসফাংশন বা যৌন অক্ষমতা রয়েছে তাদের এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার অব্যর্থ ওষুধ এটি।

যৌন অক্ষমতার কারণে অনেক সময় শারীরিক ও মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। হাতিশুর গাছের শিকড় শারীরিক ও মানসিক চাপ কমায়। তবে অবশ্যই এর শিকড় খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। 

হাতিশুর গাছের উপকারিতা জেনে নিন 

হাতিশুর গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এটা প্রাচীন ভারতের আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে পরিচিত। হাতিশুর গাছের শিকড়ে রয়েছে নানারকম পুষ্টি উপাদান। শরীরের ক্ষতস্থানে গাছের পাতা পেস্ট করে লাগিয়ে দিলে। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে তা সেরে যায়। এছাড়া যদি কারো চোখ জ্বালাপোড়া করে ,সঙ্গে সঙ্গে হাতিশুর  গাছের পাতার রস চোখে দিলে সাথে সাথে সেরে যায়। 

হাতিশুর গাছে পাতার রস এ সমস্ত রোগের অব্যর্থ মহা ঔষধ। এছাড়া সর্দি কাশি ও জ্বর নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। যৌন অক্ষমতা দূর করার জন্য হাতিশুর গাছের শিকড় মহা ঔষধ। এছাড়া আরো ছত্রাক নিরাময়, টাইফরেড জ্বর থেকে মুক্তি, ত্বকের ব্রণ দূর, শরীরের ফোলা ও ব্যথা কমাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, বদহজম দূর করতে, বিষাক্ত পোকামাকড় কামড়ালে এর থেকে স্বস্তি পেতে হাতিশুর গাছ ব্যবহার করা হয়। 

হাতিশুর গাছ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানুন 

হাতিশুর গাছ, শিকড় ও পাতা নানা রকম রোগের মহাঔষধ। প্রাচীন ভারতে এটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এখনো এর ব্যবহারের কোন কমতি নেই। তবে হাতিশুর গাছ খাওয়ার নিয়ম আছে। নিয়ম মেনে সেবন না করলে অথবা খেলে উপকার আসবে না। তাই আমাদের আগে হাতিশুর গাছ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। তারপর এটি ব্যবহার করতে হবে। চলুন জেনে নেই এর নিয়ম কানুন। 

আরও পড়ুনঃ পুদিনা পাতার ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নিন 

হাতিশুর গাছের শিকড় পানির সাথে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সিদ্ধ করে খাওয়া যাবে। কখনো কখনো হাতিশুর গাছের পাতা পেস্ট করে ক্ষতস্থানে লাগাতে হয়। আবার পাতার রস ক্ষতস্থানে বা চোখে লাগাতে হয়। তবে একটা বিষয় যেহেতু এটি একটি ভেষজ আয়ুর্বেদিক ওষুধ। তাই এটি সেবনের পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

হাতিশুর গাছের গুড়া খাওয়ার নিয়ম জানুন 

হাতিশুর গাছের কান্ড পাতা শিকড় সবকিছুই ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই এই গাছকে মহা ঔষধ বলা হয়। যৌন সমস্যা থেকে শুরু করে নানারকম জটিলতর রোগ নিরাময়ে এই ওষুধের জুড়ি মেলা ভার। তবে হাতিশুর গাছ গুঁড়ো করে খাওয়া যায় বা সেবন করা যায়। এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে। 

হাতিশুর গাছের এক থেকে দুই গ্রাম গুঁড়ো এক কাপ দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যাবে। আবার চাইলে একটা গরম পানির সাথেও খেতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই ফলাফল একই থাকবে। এটা খেলে যৌন সমস্যা, বদহজম, শরীর হাত পা ব্যথা সহ আরো নানারকম রোগ নিরাময় করে থাকে। তবে একে তো সতর্ক থাকতে হবে যেন মাত্রা অতিরিক্ত খেয়ে না ফেলেন। 

হাতিশুর গাছ - শিকড় খাওয়ার সতর্কতা সম্পর্কে জেনে নিন 

হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা অনেক। এটি নানা রকম দুরারোগ্য রোগের মহাপথ্য। যেহেতু এটি একটি আয়ুর্বেদিক ওষুধ। তা এটি খাওয়ার জন্য কিছু নিয়মকানুন মেন চলতে হয়। নিয়ম মেনে এটি সেবন বা খেলে উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু মাত্র অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। চলুন জেনে নেয়া যাক হাতিশুর গাছ - শিকড় খাওয়ার সতর্কতা সম্পর্কে। 

ফিচার ইমেজ ০৩ 

গর্ভবতী মায়েদের হাতিশুর গাছ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এছাড়া যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের হাতিশুর গাছ বা শিকড় খাওয়া যাবে না। হাতিশুর গাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে বয়স্ক গাছ বাছাই করতে হবে। কারণ বয়স্ক গাছে রয়েছে এই সমস্ত গুনাগুন। যেহেতু হাতিশুর গাছের গুনাগুন বেশি। এর অপকারিতা নেই বললেই চলে। 

হাতিশুর গাছের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানুন

যেহেতু হাতিশুর গাছের শিকড়ে উপকারিতা বেশি তাই এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বলেই চলে। তারপরেও এই গাছের পার্শ্ব প্রতিক্রি আছে। এই গাছের শিকড় অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। চলুন জেনে নেয়া যাক কি কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

হাতিশুর গাছের শিকড় অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মুত্রের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও বদ হজমের সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা, এলার্জির সমস্যা, রক্তচাপের সমস্যা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে। তাছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের হাতে সুর গাছের শিকড় সেবন করলে জরায়ু সংক্রান্ত সমস্যা হবে। আবার অতিরিক্ত হাতিশুর গাছের শিকড় সেবন করলে তা বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাই খাওয়ার আগে আমাদের অবশ্যই আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। 

লেখকের মন্তব্য জেনে নিন

আপনি যদি উপরের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণভাবে মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি হাতিশুর গাছের শিকড়ের উপকারিতা - খাওয়ার নিয়ম ছাড়াও এ সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য জেনে গেছেন।  তাই আপনাদের নতুন করে আর কিছু জানানোর নেই। 

তাই আমার মন্তব্য থাকবে, যদি কেউ হাতিশুর গাছের শিকড়, পাতা খেতে চায় তাহলে অবশ্যই আয়ুর্বেদিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিবে। এতে করে তার শরীরের কোন প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না।  

উপরের আলোচ্য আর্টিকেলটিতে যদি কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনারা ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং আপনাদের কাছে যদি মনে হয় আমি কোন কিছু বাদ দিয়েছি বা ভুল করেছি , তাহলে অবশ্যই আপনারা কমেন্ট বক্সে জানাবেন। এতে আমি পরবর্তী আর্টিকেলগুলো আরও  নির্ভুলভাবে লেখার চেষ্টা করব।  ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন।