গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানুন

 

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-সম্পর্কে জানতে চান ? হ্যাঁ আপনি সঠিক জায়গায় ক্লিক করেছেন।আজকে আমি আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে । তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে জানতে সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন । 


ফিচার ইমেজ ০১


আজকে আমি এই আর্টিকেলটিতে শুধু গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বলবো না , সাথে কলা খাওয়ার আরো নানান দিক সম্পর্কে আলোচনা করা করব। আশা করি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন । চলুন দেরি না করে শুরু করা যাক ।

পোস্ট সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

উপকারিতাঃ
গর্ভাবস্থায় একজন মাকে সবসময় পুষ্টিকর ফলমূল খেতে হয় । তাইতো কলা একটি পুষ্টিকর ফল । কলার মধ্যে থাকে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন যা শিশু ও মা উভয়কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে । আজ আমরা জানবো কলার বিভিন্ন  উপকারিতা সম্পর্কে । 

বমি বমি ভাব কমিয়ে দেয়, দ্রুত এনার্জি যোগায় , শিশুদের জন্মগত ত্রুটি কমিয়ে দেয় , কোষ্ঠকাঠিন্য হয় না,শিশুর স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে সহায়তা করে,হাড়ের বিকাশে সহায়তা করে,রক্তস্বল্পতা কমিয়ে দেয়, ক্ষুধামন্দা দূর করে, শরীরের ত্বক সুস্থ রাখে এছাড়াও কলার আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে ।


ফিচার ইমেজ ০২ 


অপকারিতাঃ
কলা একটি শর্করাযুক্ত খাবার এটি প্রচুর পুষ্টিগণের ঠাসা। কিন্তু কলা পরিমিতভাবে খেতে হবে । তা না হলে দাঁতের ক্ষয় হবে । আর এক্ষেত্রে একজন গর্ভবতীর যদি ডায়াবেটিস থাকে তাহলে কলা খাওয়ার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত । 

গর্ভবতী মহিলাদের এলার্জি থাকলে আপনি কলা খাওয়া থেকে একদম দূরে থাকুন। কেননা কলাতে চিটিনেজ থাকে যা একটি অ্যালার্জিয়ান । অতিরিক্ত কলা খেলে রক্তচাপ হ্রাস ও দ্রুত ওজন বেড়ে যায় ।আবার গর্ভবতী মায়ের যদি কোন কিডনির সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই কলা পরিমিত খেতে হবে । 

কলার সকল পুষ্টি গুণ সম্পর্কে জানুন 

কলায় প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে যেমন; ভিটামিন সি ,ভিটামিন বি৬,ভিটামিন এ , পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, কপার, ম্যাঙ্গানিজ, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট রয়েছে । একটি মাঝারি আকারের কলায় ১০৫ ক্যালোরি পুষ্টি উপাদান থাকে ।   
 
কলা পুষ্টিগুণ মানব শরীরের জন্য অনেক উপকারী । এটি আমাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে । ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় এটি অনেক বড় ভূমিকা । তাছাড়া যারা দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করাতে চায় তাদের জন্য  কলা অনেক উপকারী । কলা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্টকের ঝুঁকি কমায় । 

কলার বিভিন্ন জাত সম্পর্কে জেনে নিন 

বীজের উপর ভিত্তি করে কলা কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে  

  1. বীজ যুক্ত কলাঃ এগুলোতে সাধারণত বীজ থাকে তাই এদের বীজ যুক্ত কলা বলা হয়।এরা বুনো বা আদি জাতের হয়ে থাকে যেমন; এটেকলা, বতুরআইটা ,  গোমা, সাঙ্গি আইটা ইত্যাদি ।
  2. বীজ বিহীন কলাঃ এগুলোতে সাধারণত বীজ থাকে না তাই এদের বীজ বিহীনকলা বলা হয় ।এগুলো উদ্ভিজ্জভাবে বংশ বিস্তার করে যেমন;দুধসর,অগ্নিসর, দুধসাগর,সবরি, অমৃত সাগর ইত্যাদি । 
  3. দু একটি বীজ যুক্ত কলাঃ এই জাত গুলোতে অল্প পরিমাণে বীজ থাকে যেমন; চম্পা, চিনিচম্পা, কবরী, চন্দনকবরী , জাব কাঁঠালি ইত্যাদি । 
এছাড়াও বাংলাদেশে অনেক উন্নত জাতের কলা চাষ হয় যেমন; বাড়ি কলা -১ ,বাড়ি কলা- ২  ,বাড়ি কলা-৩ ,বাড়ি কলা-৪ । বাংলাদেশে মোটামুটি সারা বছরই কলা পাওয়া যায় । তবে জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত সময়কে কলার মৌসুম বলা হয় । 

কলা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন 

কলা একটি পুষ্টিকর ফল । কলাতে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন ,খনিজ ,ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট । যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন রকমের রোগ প্রতিরোধ সহায়তা করে । কলাতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ও হজম শক্তি বৃদ্ধি করে । 

কলায় থাকা ভিটামিন ও খনিজ মেজাজ ভালো রাখতে সহায়তা করে । কলাতে থাকা ভিটামিন বি ও সি স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে,এছাড়াও ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। কলাতে থাকা ভিটামিন কিডনি ভালো রাখে ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।তাই বলা যায় কলা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে । 
আরও পড়ুনঃ আমরা নাম আকাশ 

কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিন 

কলা একটি পুষ্টিকর ফল । কলাতে থাকা ভিটামিন আমাদের শরীরের অনেক রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে । এর জন্য আমরা কলা খাই । কিন্তু কোন কিছুই নিয়মের বাইরে খাওয়া ঠিক না ।এতে আমাদের শরীরের উপকারের থেকে অপকারই বেশি হয় । কলা খাওয়ার অপকারিতা সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করব ।

যেহেতু কলা একটি শর্করা জাতীয় ফল ,তাই এতে চিনির পরিমাণ একটু বেশি। যাদের ডায়াবেটিসের  সমস্যা আছে তাদের জন্য কলা খাওয়া মোটেও ঠিক না। আবার যারা ডায়েট করছেন, তাদের জন্য কলা খাওয়া ঠিক হবে না । কারণ কলাতে থাকা ভিটামিন ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । আবার অতিরিক্ত কলা খাওয়ার কারণে কারো কারো ঠান্ডার সমস্যা হয়ে থাকে । এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন আসলে কলা খাওয়ার উপকারিতা কি । 

কলা খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন

অনেক ভিটামিন থাকার কারণে আমরা কলা খেয়ে থাকি কিন্তু কলা খাওয়ার অনেক নিয়ম কানুন আছে চলুন জেনে নেয়া যাক

  •  সকালের নাস্তায় কলা খাওয়া যেতে পারে । কারণ সকাল বেলা কলা খেলে সারাদিন এনার্জি বুস্ট করে। 
  • কলাতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় খালি পেটে কলা খাওয়া যাবে না ।এতে করে এসিডিটি ও হজমের সমস্যা হবে ।
  • প্রাপ্তবয়স্করা দিনে দুই থেকে তিনটি, শিশুদের জন্য একটি যথেষ্ট ।
  • যাদের ঠান্ডার সমস্যা আছে তারা রাতে কলা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন ।
  • আবার কলা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে যেমন; পিনাট বাটার ,দই , ভাত ইত্যাদি সাথে খেতে পারেন । এতে হজমে কোন সমস্যা হয় না । 

উপরোক্ত নিয়মে মেনে কলা খেলে আশা করছি কোন সমস্যা হবে না । বর্তমান বাজারে কলাতে নানা রকম মেডিসিন দেয়া হয় যাতে করে কলা বেশিদিন রাখা যায় এবং তাড়াতাড়ি পাকানো যায় । কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এ ধরনের ব্যবসায়ীদের থেকে । এবং ভালো মনের কলা খেতে হবে ।

 কলা খেলে কি আসলেই ঠাণ্ডা লাগে 

কলা খেলে সাধারণত ঠান্ডা লাগে না । তবে যাদের অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের কিছুটা সমস্যা হতে পারে ।এর কারণ হলো কলা একটি উচ্চ হিস্টামিন যুক্ত খাবার এবং এতে মিউকাস রয়েছে । তবে যাদের ঠান্ডা সর্দিতে শক্তি কমে যায় তাদের জন্য কলা খাওয়া ভালো । কিন্তু যাদের আগে থেকেই এলার্জির সমস্যা তাদের জন্য কলা খাওয়া ঠিক নয় । 
 
যেহেতু কলে একটি পুষ্টিকর ফল । তাই আমরা নিয়ম মেনে কলা খাওয়ার চেষ্টা করব । সাধারণত কলা খেলে ঠান্ডা লাগে না ,তবে যাদের আগে থেকেই এলার্জির সমস্যা আছে তাদের জন্য এটি সম্ভবনা কারণ হতে পারে । তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক নিয়মে কলা খাওয়া যেতে পারে ।

 বাচ্চাদের কলা খাওয়ালে কি কোন সমস্যা 

বাচ্চাদের কলা খাওয়ালে কি কোন সমস্যা ? এ সম্পর্কে বলতে গেলে আমি বলব যে, না বাচ্চাদের কলা খাওয়ালে কোন সমস্যা নেই । কিন্তু সব কিছুরই একটা নিয়ম আছে ,আমরা যদি বাচ্চাদের নিয়ম মেনে কলা খাওয়াই তাহলে তাদের শরীরের জন্য অনেক ভালো । এতে কোন সমস্যা নেই । উচ্চ ভিটামিন ও প্রোটিনযুক্ত  ফল ।


ফিচার ইমেজ ০৩ 


কলাতে প্রচুর ভিটামিন ও পুষ্টি থাকার কারণে আমরা আমাদের বাচ্চাদেরকে কলা খাওয়ানোর প্রতি অনেক আগ্রহী থাকি । আপনার শিশু যদি এলার্জি ঠান্ডার সমস্যা না থাকে তাহলে অল্প পরিমাণে কলা খাওয়ানো যেতে পারে । কলাতে থাকা ভিটামিনের কারণে শিশুর হজম শক্তি, স্মৃতিশক্তি, শারীরিক বিকাশ ,ইত্যাদি বৃদ্ধি করে । পরামর্শ থাকবে আপনার সন্তানের যদি কোন স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা থাকে তাহলে ডক্টরের পরামর্শ নিয়ে কলা খাওয়ান । 

বৃদ্ধদের কলা খাওয়ালে কি কোন সমস্যা 

সাধারণভাবে কলা একটি পুষ্টিকর ফল যা বয়স্কদের জন্য অনেক উপকারী । কারণ কলাতে থাকে ভিটামিন বি, ভিটামিন বি৬, ফাইবার ,পটাশিয়াম ইত্যাদি । যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ,কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ,শক্তির জোগান দেয় ইত্যাদি সমস্যা দূর করে । তবে কিছু ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে কারণ যদি কোন বৃদ্ধের ডাইবেটিস, হজম, কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা থাকে তাহলে ডক্টরের পরামর্শ অনুযায়ী কলা খেতে হবে । 

বয়স্ক ব্যক্তিদের কলা খাওয়ার আগে তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কলা খাওয়া যেতে পারে। কলার সাথে পানি পান করতে হবে । এতে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে । আবার কোন বয়স্ক ব্যক্তির যদি এলার্জির সমস্যা থাকে তাহলে সম্পূর্ণভাবে কলা খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে ।বেশিরভাগ বয়স্ক ব্যক্তিদের কিডনির সমস্যা থাকে । কিডনির সমস্যা হলে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয় । যেহেতু কলাতে পটাশিয়ামের পরিমাণ অধিক । তাই কিডনির সমস্যা থাকলে একটিও কলা খাওয়া যাবে না

লেখকের মন্তব্য সম্পর্কে জেনে নিন 

গর্ভাবস্থায় কলা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ছাড়াও আরো নানা বয়সের মানুষদের কলা খাওয়ার নানান দিক সম্পর্কে আমি বিশদ আলোচনা করেছি । আপনি যদি উপরের সমস্ত বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে পড়ে থাকেন তাহলে আপনি কলা খাওয়ার নানান দিক সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে গেছেন ।

তাই আমি নতুন করে আর কিছু বলছি না । তবে আমার উপদেশ থাকবে ,আপনারা যারা কলা খাবেন অবশ্যই কলা খাওয়ার আগে এর নিয়ম কানুন ও পরিমান ভালো ভাবে জেনে নিবেন । তাহলে কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি হবে না । এবং অন্য কেউ এই ব্যাপারে সচেতন করবেন । 

সম্মানিত পাঠকমন্ডলী উপরের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । আর আপনাদের কারো কাছে যদি মনে হয় ,কোন কিছু বাদ পড়েছে বা কোন কিছু ভুল হয়েছে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানাবেন ।ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

gotechbd এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url