গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় - গর্ভাবস্থায় কিভাবে ঘুমানো উচিত


গর্ভকালীন সময় প্রতিটি মায়ের কাছে একটা আশীর্বাদ স্বরূপ তাই গর্ভাবস্থায় দরকার ভালো ঘুমেরএজন্য আপনারা অনেকেই প্রশ্ন করেন, গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়?-গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়? প্রত্যেক মানুষেরই গড়ে সর্বনিম্ন ৬ থেকে ৭ ঘন্টা ঘুমানো উচিত আর ঘুম ঠিকমতো না হলে শারীরিক ও মানসিক ব্যাপক বিপর্যস্ত ঘটে। 


ফিচার ইমেজ ০১


আর একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য নিয়মিত ঘুমানো যে কতটা দরকার তা আপনারা বুঝতেই পারছেনগর্ভাবস্থায় ঘুমানোর অনেকগুলি নিয়ম কানুন রয়েছে আজ আমি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর নানান দিক সম্পর্কে আলোচনা করব যদি আপনারা সমস্ত আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়েন আশা করি আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। 

পোস্ট সূচিপত্রঃগর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় 

গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় জানুন 

গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়? এ বিষয়টা একজন গর্ভবতী মায়ের জানা অনেক বেশি জরুরী।যেহেতু , গর্ভাবস্থায় ঘুমানো টা অনেক বেশি জরুরি। কারণ এই সময়টাতে গর্ভবতী মহিলাদের নানা রকম সমস্যা হয়। যেমন বমি বমি ভাব, খাবারের অরুচি, পেট ব্যথা, মাথা ঘুরানো ছাড়াও আরো অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। তাই সঠিক নিয়ম মেনে ঘুমালে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে না। চলুন জেনে নেই এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কি বলেন 

আরও পড়ুনঃ ০১  

বিশেষজ্ঞদের মতে গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রথম তিন মাস গর্ভাবস্থায় যেকোনো পজিশনে ঘুমাতে পারবেন। এতে কোন সমস্যা নেই। আসলে বিশেষজ্ঞরা, গর্ভাবস্থায় ডানদিকে ঘুমানো নিয়ে সেরকম কোন কিছুই নির্দেশ দেননি। তারা যেটা বলেছে, গর্ভাবস্থার প্রায়  শেষের দিকে ডানপাশে ঘুমানো উচিত নয়। কারন এই সময়টাতে ডান পাশে ঘুমালে সন্তানের রক্ত চলাচল সচল থাকে না। আশা করছি আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

গর্ভাবস্থায় বাম পাশে ঘুমালে কি হয় জানুন 

যেহেতু গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়ের জন্য ঘুমানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় বামদিকে ঘুমানো অনেক ভালো। এতে সন্তানের রক্ত ও অক্সিজেন প্রবাহ সচল থাকে। এছাড়াও গর্ভের সন্তানের লিভারের উপর চাপ কমায়। শিশুর রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে । গর্ভাবস্থায় বাম পাশে ঘুমালে হৃদপিণ্ড থেকে জরায়ু ও শিশুর দিকে রক্তের প্রবাহ উন্নত থাকে।


ফিচার ইমেজ ০২ 


কিন্তু বিশেষজ্ঞরা ঘুমানো কি বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। এক্ষেত্রে তারা মনে করেন গর্ভাবস্থায় মা যেভাবে ঘুমাতে সুবিধা বোধ করে, তাকে সেভাবে ঘুমানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম থাকে। যেমন ,গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস গর্ভবতী মাকে অনেক সতর্কতার সাথে ঘুমাতে হয়। যেন তার শিশু সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকে।

গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়ার কারণ জানুন বিস্তারিত 

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য ঘুম কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা উপরে আমি অনেক সুন্দর ভাবে বুঝিয়েছি। তাহলে বুঝতেই পারছেন গর্ভাবস্থায় যদি আপনার ঘুম ঠিকঠাক মতো না হয় । তাহলে আপনি এবং আপনার অনাগত সন্তান দুই জনই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকবেন। তাই আজকে আমি আপনাদেরকে বলবো গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়ার কারণ কি?

গর্ভাবস্থায় গর্ভবতী মায়েদের শরীরের নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায়। এরকম অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কারণেই মূলত তাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। যেমন হরমোনের পরিবর্তন, ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ, বমি বমি ভাব, পায়ের অস্বস্তিকর ব্যথা, মাজা ব্যথা বা ব্যাক পেইন এবংএসিডিটির সমস্যা ইত্যাদি। এছাড়াও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে ব্রেস্ট পেইন্ট শুরু হয় কারণ এই সময় বেস্ট স্থাপিত হয়ে ফুলে যায়। আশা করি বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়ার কারণ। 

গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে কি হয়

গর্ভাবস্থায় বিশ্রাম নেওয়া মায়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  তবে সবকিছুই বেশি বেশি ভালো না। গর্ভাবস্থায় বেশি শুয়ে থাকলে মা ও শিশু উভয়েরই স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়।  আরও যে সমস্যাগুলো হতে পারে গর্ভপাতের সম্ভাবনা থাকে,  রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্টের সমস্যা হওয়া, ওজন বৃদ্ধি পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে, বাচ্চার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেড়ে যায়, গর্ভবতী মায়ের পানি স্বল্পতা দেখা যায় ইত্যাদি। 

গর্ভাবস্থায় শুয়ে থাকার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। তাই এই সময়টাতে মায়ের উচিত বুকের উপর ভর দিয়ে না শোয়া। ডান অথবা বাম কাঁধে শোয়া। এতে করে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্য নিরাপদ থাকে।একটা গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ গর্ভ পাতের কারণ হলো গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত শুয়ে থাকা। এই সময়ে গর্ভবতী মায়ের হাটাহাটি চলাফেরা করা উচিত। 

গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর সঠিক  পজিশন জেনে নিন

সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য ঘুম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই ঘুমটা যদি একজন গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে হয়ে থাকে তাহলে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীদের মতে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের দৈনিক সর্বনিম্ন ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। একজন গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে ও তাই।  কিন্তু  সমস্যা হচ্ছে গর্ভবতী মহিলারা সব পজিশনে ঘুমাতে পারেন না। কারণ এই সময়টায় তারা অনেক বেশি অসুস্থ বোধ করে। 

আরও পড়ুনঃ ০৩ 

তবে শিশু ও মাকে সুস্থ রাখার জন্য ঘুমানোর কয়েকটা পজিশন আছে। যেই পজিশনে ঘুমালে মা ও শিশু উভয়েরই স্বাস্থ্য নিরাপদ থাকে। যেমন ডান পাশে ঘুমানো অথবা বাম পাশে ঘুমানো, এক্ষেত্রে  ঘুমানোর সময় পিঠ ও দু পায়ের মাঝখানে বালিশ রাখলে শরীর ও হাতের ব্যথা থাকে না। তবে কখনোই বুকের উপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকা যাবে না। কারণ এই পজিশনে ঘুমালে শিশুর শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত ঘটে। তাই একজন গর্ভবতী মাকে অবশ্যই ঘুমানোর ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। 

গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে ঘুমালে কি হয়

চিকিৎসকদের মতে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস ঘুমালে কোন সমস্যা নেই কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন জরায়ু ভারী হয়ে যায় তখন চিৎ হয়ে ঘুমালে মা ও শিশু উভয়েরই স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে কারন চিত হয়ে ঘুমানোর ফলে শিশুর হৃদপিণ্ড প্রেসারে থাকে ফলে রক্তবাহ সচল থাকে না তাছাড়াও এই পজিশনে ঘুমালে গর্ভবতী মায়ের হার্ট বিট বেড়ে যায়।


ফিচার ইমেজ ০৩


এছাড়াও গর্ভাবস্থায় চিত হয়ে ঘুমালে আরো অনেক সমস্যা দেখা যায়। যেমন; হজমের সমস্যা, শরীর হাত পায়ের ব্যথা, বুকে ব্যথা,শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, দেহে রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়া ছাড়াও অন্যান্য হরমোনাল সমস্যা হয়ে থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় কখনো চিৎ হয়ে ঘুমানো উচিত নয়। ডান পাশ  অথবা বাম পাশে ঘুমানো উচিত। 

গর্ভাবস্থায় কাত হয়ে ঘুমালে কি হয়

গর্ভাবস্থায় ঘুমানো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে গর্ভাবস্থায় ঘুমানোর কিছু নিয়ম কানুন আছে। কারণ গর্ব অবস্থায় সব পজিশনে ঘুমানো মা ও শিশুর জন্য উচিত নয়। এখন আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় কাত হয়ে ঘুমালে কি হয়?  এতে কি মা ও শিশুর কোন স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে? 

গর্ভাবস্থায় কাত হয়ে ঘুমালে কোন ক্ষতি নেই। গর্ভবতী মা ডান কাত অথবা বাম কাত যে কোন ভাবে ঘুমাতে পারে। এতে গর্ভবতী মায়ের শরীর সুস্থ থাকে। যেমন; শরীরের ব্যথা থাকে না,  হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, মা ও শিশুর রক্ত চলাচল ঠিক থাকে, ঘুম ভালো হয় ইত্যাদি।

গর্ভাবস্থায় ঘুম এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন

গর্ভাবস্থায় ঘুমানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন সর্বনিম্ন ৮ ঘন্টা ঘুমানো দরকার। আর একজন গর্ভবতীর শুধু আট ঘন্টা ঘুমানোই নয়, সঠিক নিয়মে ঘুমানো দরকার। কেননা ঘুমের ঘাটতি হলে অথবা ঘুমের পজিশন ঠিক না থাকলে বাচ্চা এবং মা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

তাছাড়াও ঘুমের ঘাটতি হলে ইমম্যাচিউর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায় আর এতে করে মা ও শিশু উভয়েরই শারীরিক সমস্যা দেখা যায়। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত ঘুমানো ও নিয়মিত ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। 

গর্ভাবস্থায় ভালো ঘুমানোর জন্য কিছু টিপস

গর্ভাবস্থায় ভালো ঘুমানো গর্ভবতী মায়ের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গর্ভাবস্থায় ভালো ঘুমানোর জন্য নিচে কিছু টিপস দেওয়া হলো
  • নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ভালো ঘুম নিশ্চিত করা সম্ভব
  • যেই ঘরে ঘুমাব এখানে সেখানে অন্ধকার শান্ত থাকতে হবে 
  • ছোট ছোট অল্প পরিমাণে খাবার কয়েকবার খেতে হবে
  • তবে রাতে ঘুমানোর ৩ ঘণ্টা আগে কোন খাবার গ্রহণ করা যাবে না
  • কফি ,চা ,কোমল পানীয় এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
উপরে নেওয়া পদক্ষেপগুলো মেনে চললে গর্ভাবস্থায় ভালো ঘুম সম্ভব। 

লেখকের মন্তব্য সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন

আপনি যদি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন। তাহলে আপনি অবশ্যই জেনে গেছেন গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় ছাড়াও আরো নানারকম বিষয় সম্পর্কে। তাই আপনাদের নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে আমার কাছে যেটা মনে হয় যে, গর্ভাবস্থায় একজন মা যেভাবে ঘুমাতে আরম বোধ করে তার সেভাবেই ঘুমানো উচিত।
কিন্তু, গর্ভাবস্থায় বুকের উপর ভর দিয়ে কখনো যেন না ঘুমা। এতে বাচ্চা ও মা উভয়ই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে। সুতরাং এই নিয়মগুলো মেনে চললে একজন গর্ভবতী মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ থাকবে । উপরের আলোচ্য বিষয়ে যদি আমার কোন ভুল হয়ে থাকে, আপনাদের কাছে মনে হয় কিছু বাদ পড়েছে তাহলে অবশ্যই তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন। তাহলে পরবর্তীতে আমি আরো নির্ভুলভাবে আর্টিকেল লেখার চেষ্টা করব।


























এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

gotechbd এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url